খবর সবসময় প্রতিবেদন :
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুক। বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় রাজধানীর গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় তার সঙ্গে দেখা করতে যান ব্রিটিশ হাইকমিশনার। এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে এই সাক্ষাতে পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে এ বিষয় নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন সারাহ কুক। ইউকের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক, তাদের যে ভাবনা তাও খালেদা জিয়াকে জানিয়েছেন। খালেদা জিয়া অনুরোধ করেছেন ইউকে-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার জন্য। আগামী দিনে দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে আরও উন্নততর অবস্থায় যেতে পারে সে অনুরোধও করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
দীর্ঘ সাড়ে ৬ বছর পর এটাই কোনো কূটনীতিকের সঙ্গে খালেদা জিয়ার প্রথম সাক্ষাৎ। এর মধ্যে দিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে দেখা গেল। সাক্ষাতে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, দেশের চলমান পরিস্থিতিসহ নানা বিষয়েও তাদের মধ্যে আলাপ হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএনপি সূত্র জানায়, অসুস্থ থাকলেও খালেদা জিয়া মানসিকভাবে অনেক শক্ত আছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে সাজা মওকুফ করে মুক্তি দেওয়া হয়। দীর্ঘ সাড়ে ৬ বছরেরও বেশি সময় বন্দি ছিলেন তিনি। শর্ত থাকার কারনে রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। পুরোপুরি মুক্তি পাওয়ার পর থেকে দলের সিনিয়র নেতাসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারাও তার সঙ্গে দেখা করেছেন।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সাক্ষাৎকালে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক ডা: এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার ও অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী এবং দলের স্পেশাল এ্যাসিসট্যান্ট টু দ্য চেয়ারপারসনস ফরেন এ্যাফেয়ার্স এডভাইজারি কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল।
সাক্ষাতের পর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ম্যাডামের স্বাস্থ্য নিয়ে কূটনৈতিক মহলে শঙ্কা ছিল, চিন্তা ছিল। উনার সুস্থতা নিয়ে সকলের একটা প্রশ্ন ছিল। যেহেতু ম্যাডাম এখন কূটনীতিকদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করতে পারছেন, দেশে একটা মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এই পরিবর্তনে। বাংলাদেশে মুক্ত পরিবেশে কুটনীতিকরা তাদের কাজগুলো এখন করতে পারছে। ওদের প্রথম জানার বিষয় ছিলো ম্যাডামের শরীর কেমন আছেন, ভালো আছেন কিনা? উনার চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি আছে কিনা- এসব বিষয় আলোচনা করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় কথা হয়েছে এই পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে, নতুন প্রেক্ষাপটে আমরা কোথায় যাচ্ছি।বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে এই বিষয় নিয়ে ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলেছেন। ইউকের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক, তাদের যে ভাবনা সেটা ম্যাডামকে বলেছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ব্রিটেন কি করতে চায়, দুই দেশের সস্পর্ক উন্নয়নে তারা কি করতে চায় সেগুলো ম্যাডামকে অবগত করেছেন।’
আমির খসরু বলেন, ‘ম্যাডাম যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার কথা বলেছেন।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ম্যাডামকে বিদেশে নিতে যে দীর্ঘ সময়ের জার্নি সে বিষয়ে তার প্রস্তুতির বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। মেডিকেল বোর্ড বলেছেন, ইউকেতে নেওয়া হলে ৮ থেকে ১৩ ঘন্টা সময় লাগে অথবা ইউএসএ নিতে হলে ১৮ থেকে ২১ ঘন্টা ফ্লাইং আওয়ার লাগবে। কাজেই শারীরিক সুস্থতার ফর দিস ফ্লাইং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ইউকে ও ইউএসএ‘র হসপিটালের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। ম্যাডামের মেডিকেল বোর্ডের যোগাযোগ আগে থেকে হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব উনার শারীরিক সুস্থতা ফ্লাইংয়ের মতো হলেই বিদেশে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি দেখা হবে।’
দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ২১ আগস্ট বাসায় ফেরেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ৮০ বছর বয়সি খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিল রোগে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন। তিনি রাজধানীর বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন।