খবর সবসময় প্রতিবেদন :
শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গেলেও তার অনুসারীরা এখনো বিভিন্ন উপায়ে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করে যাচ্ছ। এবার এনআরবিসি ব্যাংককেও নৈরাজ্য করার চেষ্টা করছে দুর্নীতিবাজরা। পুনরায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে দুর্নীতির দায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত সাবেক পরিচালক ও কিছু সাবেক কর্মকর্তা মিলিতভাবে ব্যাংকের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা করছে। তারা বর্তমানে পরিচালনা পর্ষদ এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে, যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যাংকটি দখল করে আবার লুটপাটের সুযোগ তৈরি করা।
গত ২৩ আগস্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের কাছে এক চিঠিতে এই ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করেছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এই অসাধু চক্রটি বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে এনআরবিসি ব্যাংকের গতি থামাতে নানা অপকৌশলে লিপ্ত হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বিগত কয়েক বছরে দেশের ব্যাংকিং খাতে রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহার ব্যাংকগুলোকে বিপদে ফেলে দিলেও এনআরবিসি ব্যাংক তার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে গ্রামীণ জনগণের উন্নয়নে বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়ে এনআরবিসি ব্যাংক গত দুই বছরে প্রায় এক লাখ মানুষকে স্বল্প সুদে বিনা জামানতে ঋণ দিয়েছে। এতে দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় ব্যাংকটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এনআরবিসি ব্যাংক সবসময় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ঋণ বিতরণ থেকে বিরত থেকেছে, যা তাদের স্থিতিশীলতা রক্ষায় সহায়ক হয়েছে। গত সাত বছরে ব্যাংকটি সব আর্থিক সূচকে অসামান্য উন্নতি করেছে। নিট মুনাফা দ্বিগুণ হয়েছে, আমানত সংগ্রহ সাড়ে চার গুণ বেড়েছে এবং ঋণ বিতরণ পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০১৩ সালে প্রবাসী উদ্যোক্তাদের হাত ধরে এনআরবিসি ব্যাংকের যাত্রা শুরু হলেও ইঞ্জিনিয়ার ফরাসত আলী ব্যাংকটির লাইসেন্স নেওয়ার পর থেকেই ব্যাপক চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হন। প্রাথমিক শেয়ার বিক্রিতে দ্বিগুণ দামে শেয়ার বিক্রি এবং ঘুষের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি ব্যাংক পরিচালনা শুরু করেন। তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা, যারা ব্যাংকটিকে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করেন। ফরাসত আলী এবং তার সহযোগীরা এনআরবিসি ব্যাংকের বিভিন্ন শেয়ার বেনামে ক্রয় করেন, যা আইনগতভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
২০১৭ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয় এবং ফরাসত আলীসহ ছয় পরিচালককে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। পাশাপাশি ফরাসত আলীকে দুই বছরের জন্য আর্থিক খাতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু আওয়ামী লীগের চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ফরাসত আলী আবারও ব্যাংকটিকে দখলের চেষ্টা শুরু করেন। এবার তার সহযোগী হিসেবে যোগ দেন ব্যাংক থেকে দুর্নীতির কারণে চাকরি হারানো কিছু প্রাক্তন কর্মকর্তা। এদের মধ্যে আছেন শাফায়েত ওয়াহেদ, সৈয়দ মো. মহররম হোসেন, মাহফুজুর রহমান এবং রিয়াজ উদ্দিন আসিফ।
এই চক্রটি ২০২০ সাল থেকে বিভিন্ন সরকারি দফতর ও গণমাধ্যমে চিঠি পাঠিয়ে এনআরবিসি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ উত্থাপন করে আসছে। চিঠিতে ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তাদের নামেও স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। সম্প্রতি আওয়ামী সরকারের পতনের পর তারা আবারো সক্রিয় হয়েছে এবং এনআরবিসি ব্যাংককে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
চিঠির শেষাংশে দাবি করা হয়েছে, এনআরবিসি ব্যাংক ধ্বংসের মুখ থেকে উঠে এসে দেশের শীর্ষ ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু অসাধু চক্রটি এখন আবারও ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অপচেষ্টা করছে। এ অবস্থায় ব্যাংকটি ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে যদি এই চক্রান্ত থামানো না হয়। তাই এনআরবিসি ব্যাংককে রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের হস্তক্ষেপ এবং যথাযথ দিকনির্দেশনা প্রয়োজন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।