স্পোর্টস ডেস্ক :
শান মাসুদের টেস্ট অধিনায়কত্বের সময়টা খুব একটা সুখকর যাচ্ছে না। তার প্রথম দায়িত্ব ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে পাকিস্তান দলকে নেতৃত্ব দেওয়া। যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। সেই সিরিজে পাকিস্তান ৩-০ ব্যবধানে হেরে যায়, যা ছিল শানের জন্য এক বিশাল ধাক্কা।
এরপর পাকিস্তান দল নিজ মাঠে রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশ দলের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলে। তবে এখানেও হতাশাজনকভাবে পাকিস্তান ২-০ ব্যবধানে সিরিজ হারে।
প্রথম টেস্টে পাকিস্তান মাত্র ৩০ রানের লক্ষ্য দিয়ে হেরে যায় এবং দ্বিতীয় টেস্টে ১৮৫ রানের লক্ষ্য দিয়ে ৬ উইকেটে পরাজিত হয়।
এমন ভরাডুবি এবং পরপর সিরিজ হারের কারণে শান মাসুদের অধিনায়কত্ব নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ, কিংবদন্তি এবং ভক্তরা তাকে টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে সরানোর দাবি তুলছেন।
এমন প্রেক্ষাপটে শান মাসুদের বিকল্প হিসেবে উঠে আসছে চার জনের নাম। তারা হলেন-
সৌদ শাকিল
সৌদ শাকিল বর্তমানে পাকিস্তান টেস্ট দলের সহ-অধিনায়ক। অধিনায়কত্বের জন্য অন্যতম প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। ২৮ বছর বয়সি শাকিলকে ভবিষ্যতের অধিনায়ক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সহ-অধিনায়ক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত তার টেস্ট ক্যারিয়ার বেশ সফল। যেখানে তিনি ৫৬.৩০ গড়ে ১,১২৬ রান সংগ্রহ করেছেন। যার মধ্যে তিনটি শতকও রয়েছে।
ঘরোয়া ক্রিকেটে অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতাও রয়েছে শাকিলের। যেখানে তিনি সিন্ধু দলকে ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপের শিরোপা জেতাতে সাহায্য করেছেন। তবে আন্তর্জাতিক স্তরে তার অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতা এখনো সীমিত। তাই তাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্পূর্ণ প্রস্তুত হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
মোহাম্মদ রিজওয়ান
মোহাম্মদ রিজওয়ান তার বিশাল ঘরোয়া এবং পিএসএল অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতা নিয়ে অন্যতম শক্তিশালী প্রার্থী। তিনি পেশোয়ার এবং খাইবার পাখতুনখোয়ার মতো দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে পাকিস্তান ‘এ’ দলের অধিনায়কও ছিলেন। ২০১৯ সালে বাবর আজমের পরিবর্তে তাকে টেস্ট অধিনায়কত্ব না দেওয়া হলেও, রিজওয়ান তার নেতৃত্বের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। বিশেষ করে সম্প্রতি ১৭১ রানের একটি বড় ইনিংস খেলেছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে।
যদিও তার অধিনায়কত্বের সময়ে কিছু পরাজয়ও ছিল। তবে ডানহাতি এই উইকেটকিপার ব্যাটারের সাম্প্রতিক ফর্ম এবং ঘরোয়া ও পিএসএলে নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা তাকে অধিনায়কত্বের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী করে তুলেছে।
বাবর আজম
বাবর আজম পাকিস্তানের অন্যতম সফল অধিনায়ক। তার নেতৃত্বে ২০ টেস্টের মধ্যে ১০টিতে জয় পেয়েছে। ২০২৩-২৫ ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে জয় ছিল তার অধিনায়কত্বের আরেকটি সফল অধ্যায়। তবে ২০২৩ সালে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) অনুরোধে তিনি অধিনায়কত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।
বাবরের ব্যাটিংয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে পুনরায় তাকে অধিনায়ক করার বিষয়ে কিছু উদ্বেগ রয়েছে। তবে তার সাফল্যের রেকর্ড এবং নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা তাকে ফের অধিনায়কত্বের জন্য একটি সম্ভাব্য বিকল্প প্রার্থী করে তুলেছে। যদিও এটি পিসিবির ওপর নির্ভর করবে। তারা তাকে পুনরায় অধিনায়ক করতে চায় কিনা।
শাহীন শাহ আফ্রিদি
পাকিস্তানের গতিতারকা শাহীন শাহ আফ্রিদি টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে আরেকটি সম্ভাব্য বিকল্প। যদিও তিনি তরুণ, তার নেতৃত্বে আক্রমণাত্মক মনোভাব এবং বোলিং ইউনিটকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার ক্ষমতা তাকে টেস্ট নেতৃত্বের জন্য উপযুক্ত করে তুলেছে। বোলার হিসেবে তার অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতা কম হলেও, তার ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ রাখার ক্ষমতা তাকে দায়িত্ব নেওয়ার উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছে।
শান মাসুদের অধিনায়কত্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা এখন তুঙ্গে। আর এর মধ্যেই পাকিস্তান ক্রিকেটের ভক্তরা অপেক্ষা করছেন নতুন নেতৃত্বের জন্য। যা দলকে আবারও সাফল্যের পথে নিয়ে যেতে পারে।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) খুব শিগগিরই শান মাসুদের পরিবর্তে একজন স্থায়ী টেস্ট অধিনায়ক নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। ক্রিকেটপ্রেমীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন কে হবেন পাকিস্তানের পরবর্তী টেস্ট দলের নেতা, যিনি দলকে আরও সাফল্যের পথে নিয়ে যাবেন। সূত্র: ক্রিকেট পাকিস্তান