এনামুল হক ছোটনঃ
” সিটি কর্পোরেশন একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের কাছে সাধারণ মানুষের অনেক চাওয়া-পাওয়া। অতীতে কী হয়েছে, তা জানতে চাই না, বর্তমান নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। মানুষ ম্যাটারিয়াল নয়, চেয়ার ম্যাটারিয়াল। যিনিই এই চেয়ারে বসুক, যাতে জনগণের কল্যাণে, জনস্বার্থে কাজ করে, ময়মনসিংহবাসীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে সেই চেষ্টা করা উচিৎ। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন এলাকার রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, ছাত্র সমন্বয়ক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী ও ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন নবযোগদানকৃত প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া। ‘স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪’ এর ধারা ২৫(ক) এর উপ-ধারা (১) অনুযায়ী এক প্রজ্ঞাপনমূলে বিভাগীয় কমিশনারদের সিটি কর্পোরেশনে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার এবং উপ-ধারা (৩) অনুসারে প্রশাসকগণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এর ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবেন। মতবিনিময় সভার শুরুতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দাড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন ও দোয়া করা হয়। এরপর মুক্ত আলোচনায় এক প্রশ্নের জবাবে সভাপতি বলেন, রাজশাহী এত সুন্দর, খুলনা এত পরিকল্পিত শহর, আমাদের ময়মনসিংহ কেন পারে না। যানজটে বাংলাদেশে দ্বিতীয় ময়মনসিংহ। আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে পরিচ্ছন্ন ময়মনসিংহ দেখতে পারবেন আপনারা। পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পাশাপাশি জনসাধারণকেও সচেতন হতে হবে, ছাত্ররা পরিবর্তনের নজির স্থাপন করেছে। পরিবর্তনটা শুরু হোক নিজের থেকে। স্টেশনে অবস্থিত বড় মসজিদ এর ইমাম এর কথার আলোকে সভাপতি বলেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ দেখতে চায় ছাত্ররা। তারা এমন একটা বাংলাদেশ দেখতে চায় যে বাংলাদেশে সবাই তার দায়িত্ব স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবে, সবাই স্বাধীনভাবে তার মতপ্রকাশ করতে পারবে। জেন-জি এটা করে দেখিয়েছে। যখন সবাই এক হয়ে সকল বৈষম্যকে রোধ করতে পারবো তখনই এটি সফল গণআন্দোলন হবে। কেমন ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন আমরা চাই’ নামক উন্মুক্ত আলোচনায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনকে ঢেলে সাজানোর কথা বলেন। তারা সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের বিগত দিনের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করেও তথ্য না পাওয়ার অভিযোগ, যানজট, ফুটপাত দখল, অপরিচ্ছন্নতা, জলাবদ্ধতা, নতুনবাজার রেল গেইট এর রাস্তা ঢালাই না হওয়া, বিদ্যুৎ এর প্রিপেইড মিটার বিড়ম্বনা, মাদক ও সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, শিক্ষা বাণিজ্য নিয়ে নবযোগদানকৃত প্রশাসকের সাথে কথা বলেন এবং বিভিন্ন অভিযোগ ও পরামর্শ তুলে ধরেন। অংশীজনরা বলেন, সিটি কর্পোরেশন একটি দুর্নীতির আখড়া। কোনো মাস্টারপ্ল্যান নাই, বিল্ডিং কোড না মেনে ইচ্ছামতো অনুমোদন, প্রয়োজনের অতিরিক্ত অটোরিকশা অনুমোদনসহ ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের বাজেট বরাদ্দ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা। জবাবে সভাপতি বলেন, আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাই। ভালো পরামর্শ নিয়ে এগিয়ে আসুন। এই বিপ্লবে আপনারাই সবচেয়ে বড় স্টেক হোল্ডার। একটি সুন্দর পরিকল্পনা কাজের অর্ধাংশ। আমি এতোদিন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কর্মকর্তা ছিলাম, এখন পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব এসেছে। সকলের সহযোগিতায় আমরা একটি দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক সিটি কর্পোরেশন গড়ে তুলবো এই প্রত্যাশা। মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি কর্নেল মাহমুদ হাসান বলেন, প্রথমেই আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা আপনারা সেনাবাহিনীর নাম উচ্চারণের সাথে সাথে দেশপ্রেমিক ও গর্বিত এই শব্দদ্বয় ব্যবহার করেছেন। সততা ও সদিচ্ছা থাকায় সেনাবাহিনী যেকোনো কাজ করতে পারে। চার্টার অভ ডিউটি এন্ড টাস্ক এর ভিত্তিতে সেনাবাহিনী বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে থাকে। সমালোচনা না করে আত্মপর্যালোচনা করি। ময়মনসিংহ ধর্মীয় সম্প্রীতির যে উদাহরণ সেট করেছে তা বজায় রাখতে সকলের সহযোগিতা চাই। অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্যে সভাপতি বলেন, সব আন্দোলনেই কিছু সম্মুখ সারির যোদ্ধার দরকার হয়। দেশের ৯৮শতাংশ লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন করলেও এই আন্দোলনে তা পালন করেছে ছাত্ররা এজন্য ছাত্রদের ধন্যবাদ। মেধাবী হলো সেই যে ভালোবাসতে জানে। ঘৃণা ধরে রাখলে নিজেরই ক্ষতি। ঘৃণা নয়, ভালোবাসা দিয়ে সব জয় করতে চাই। মাথায় আইস ফ্যাক্টরি (বরফ), মুখে স্যুগার ফ্যাক্টরি, হৃদয়ে লাভ ফ্যাক্টরি থাকলে স্যাটিসফ্যাক্টরি (সন্তুষ্টি) স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে। চলুন বুকের মধ্যে বাংলাদেশকে ধারণ করে সকলে হাতে হাত মিলিয়ে সামনে এগিয়ে যাই। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইউসুফ আলী, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার তাহমিনা বেগম (জেলা পরিষদ প্রশাসক পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত)সহ সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।